ক্যালেন্ডারের কারসাজি: যেদিন সময় চুরি হলো আর হাসির হাট বসল!
জুলিয়ান ক্যালেন্ডার, যা জুলিয়াস সিজার ৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রবর্তন করেছিলেন, প্রতি চার বছরে একটি লিপ ইয়ার ধরে নিয়েছিল। এতে বছরের গড় দৈর্ঘ্য হতো ৩৬৫.২৫ দিন। কিন্তু প্রকৃত সৌর বছরের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৬৫.২৪২২ দিন। এই সামান্য পার্থক্য (প্রায় ১১ মিনিট ১৪ সেকেন্ড) দীর্ঘ সময় ধরে জমা হয়ে ক্যালেন্ডারকে সৌর বছরের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন করে তুলছিল। ফলে, গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব যেমন ইস্টার, যা বসন্তকালীন বিষুবের সঙ্গে সম্পর্কিত, ধীরে ধীরে ঋতুর থেকে সরে যাচ্ছিল। ১৫৮২ সাল নাগাদ এই ত্রুটির কারণে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার সৌর বছরের থেকে প্রায় ১০ দিন পিছিয়ে পড়েছিল।
সংশোধন: এই সমস্যা সমাধানের জন্য পোপ গ্রেগরি XIII গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার প্রবর্তন করেন। এই নতুন ক্যালেন্ডারে দুটি প্রধান পরিবর্তন আনা হয়:
দিন বাদ দেওয়া: ক্যালেন্ডারকে সৌর বছরের সঙ্গে সামঞ্জস্য করতে ১৫৮২ সালের অক্টোবরে ১০ দিন বাদ দেওয়া হয়। ৪ অক্টোবরের পরের দিন সরাসরি ১৫ অক্টোবর গণনা করা হয়। এর ফলে ক্যালেন্ডার আবার সঠিক ঋতু ও সৌর বছরের সঙ্গে মিলে যায়।
লিপ ইয়ারের নিয়ম সংশোধন: জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে প্রতি চার বছরে লিপ ইয়ার থাকলেও, গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে নিয়ম করা হয় যে, শুধুমাত্র যেসব বছর ৪০০ দ্বারা ভাগ যায় (যেমন ১৬০০, ২০০০) সেগুলোই লিপ ইয়ার হবে, যদিও ১০০ দ্বারা ভাগ যায়। এর ফলে বছরের গড় দৈর্ঘ্য আরও সঠিক হয় (৩৬৫.২৪২৫ দিন), যা সৌর বছরের কাছাকাছি।
ফলাফল: ১৫৮২ সালের ৪ অক্টোবর বৃহস্পতিবারের পরের দিন হয় ১৫ অক্টোবর শুক্রবার। এই ১০ দিন হারিয়ে যায়নি, বরং ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দেওয়া হয়েছিল ক্যালেন্ডারকে সংশোধন করতে। তবে, এই পরিবর্তন সব দেশে একসঙ্গে হয়নি। ক্যাথলিক দেশগুলো (যেমন স্পেন, ইতালি, ফ্রান্স) ১৫৮২ সালেই গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার গ্রহণ করে, কিন্তু প্রোটেস্ট্যান্ট ও অন্যান্য দেশগুলো (যেমন ব্রিটেন) অনেক পরে এটি গ্রহণ করে। ব্রিটেন ১৭৫২ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে যায়, তখন ১১ দিন বাদ দেওয়া হয় (২ সেপ্টেম্বরের পর হয় ১৪ সেপ্টেম্বর)। রাশিয়ার মতো কিছু দেশ এমনকি ২০ শতকে এই পরিবর্তন করে। এই পরিবর্তনের কারণে কিছু ঐতিহাসিক ঘটনার তারিখ নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়, কারণ ভিন্ন দেশে ভিন্ন ক্যালেন্ডার ব্যবহৃত হতো।
মজার তথ্য: এই দিন বাদ দেওয়ার ঘটনা কিছু জায়গায় জনগণের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করেছিল। কেউ কেউ ভেবেছিল তাদের জীবন থেকে দিন চুরি করে নেওয়া হচ্ছে! যদিও বাস্তবে কোনো দিন হারায়নি, শুধু তারিখের গণনা সামঞ্জস্য করা হয়েছিল। সুইডেনে এই রূপান্তর আরও জটিল ছিল। তারা ১৭০০ সালে লিপ ইয়ার বাদ দেওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু ভুল করে ১৭০৪ ও ১৭০৮ সালে লিপ ইয়ার রেখে দেয়। ফলে তাদের ক্যালেন্ডার সবার থেকে আলাদা হয়ে যায়। অবশেষে ১৭১২ সালে তারা ৩০ ফেব্রুয়ারি নামে একটি অতিরিক্ত দিন যোগ করে ক্যালেন্ডার সংশোধন করে!
উপসংহার: গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে রূপান্তরের জন্য দিন বাদ দেওয়া একটি ঐতিহাসিক প্রয়োজনীয়তা ছিল, যাতে ক্যালেন্ডার ঋতু ও সৌর বছরের সঙ্গে সঠিকভাবে মিলে যায়। এটি আজও আমরা যে ক্যালেন্ডার ব্যবহার করি, তার ভিত্তি তৈরি করেছে।
মজার মজার গল্প:
গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে রূপান্তরের সময় দিন বাদ দেওয়ার ঘটনা নিয়ে ইতিহাসে কিছু মজার, অদ্ভুত এবং কখনো কখনো হাস্যকর গল্প সৃষ্টি হয়েছিল। এই পরিবর্তন শুধু গণনার বিষয় ছিল না, বরং মানুষের মনে ভুল ধারণা, ভয়, এমনকি বিক্ষোভও তৈরি করেছিল। এখানে কয়েকটি মজার গল্প ও ঘটনা শেয়ার করছি:
১. "আমাদের দিন ফিরিয়ে দাও!" (Give Us Our Eleven Days!)
কোথায় ঘটেছিল? ব্রিটেনে, ১৭৫২ সালে।
গল্পটা কী? ব্রিটেন যখন জুলিয়ান থেকে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে যায়, তখন ১১ দিন বাদ দেওয়া হয়। ২ সেপ্টেম্বরের পর সরাসরি ১৪ সেপ্টেম্বর গণনা করা হয়। গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে সাধারণ মানুষ এই পরিবর্তনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছিল, চিৎকার করে বলেছিল, "Give us our eleven days!" (আমাদের এগারো দিন ফিরিয়ে দাও!)। তারা ভেবেছিল, তাদের জীবন থেকে ১১ দিন চুরি করে নেওয়া হয়েছে বা তাদের জীবন ছোট করে দেওয়া হচ্ছে।
মজার দিকটা কী? ঐতিহাসিকরা এখন বলেন, এই বিক্ষোভের গল্পটা সম্ভবত বানানো বা অতিরঞ্জিত। তবে, এটা থেকেই বোঝা যায় মানুষ ক্যালেন্ডার পরিবর্তন নিয়ে কতটা বিভ্রান্ত আর উদ্বিগ্ন ছিল। কিছু লোক ভেবেছিল, তারা ১১ দিন কম বাঁচবে! আরেকটা মজার বিষয় হলো, এই গল্পটা এত জনপ্রিয় হয় যে ১৯ শতকে এমনকি এই নামে একটা পেইন্টিংও তৈরি হয়, যেখানে বিক্ষোভকারীদের দেখানো হয়।
২. সুইডেনের "৩০ ফেব্রুয়ারি" কাণ্ড
কোথায় ঘটেছিল? সুইডেনে, ১৭১২ সালে।
গল্পটা কী? সুইডেন গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে যাওয়ার জন্য একটা অদ্ভুত পরিকল্পনা করেছিল। তারা ঠিক করে, ধীরে ধীরে লিপ ইয়ার বাদ দিয়ে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের সঙ্গে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের পার্থক্য কমাবে। ১৭০০ সালে তারা লিপ ইয়ার বাদ দেয়, কিন্তু যুদ্ধ আর বিশৃঙ্খলার কারণে ১৭০৪ আর ১৭০৮ সালে লিপ ইয়ার রেখে দেয়। ফলে, সুইডেনের ক্যালেন্ডার জুলিয়ান বা গ্রেগরিয়ান কোনোটার সঙ্গেই মিলছিল না—একদম আলাদা একটা ক্যালেন্ডার তৈরি হয়ে গেল!
মজার দিকটা কী? এই বিশৃঙ্খলা ঠিক করতে সুইডেন ১৭১২ সালে একটা অদ্ভুত সিদ্ধান্ত নেয়। তারা ফেব্রুয়ারি মাসে একটা অতিরিক্ত দিন যোগ করে, যাকে বলা হয় ৩০ ফেব্রুয়ারি! এটা ইতিহাসের একমাত্র ঘটনা যেখানে কোনো ক্যালেন্ডারে ৩০ ফেব্রুয়ারি বলে কিছু ছিল। এর মাধ্যমে তারা আবার জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে ফিরে যায়। পরে ১৭৫৩ সালে তারা পুরোপুরি গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে যায়, ১১ দিন বাদ দিয়ে। এই ৩০ ফেব্রুয়ারির গল্পটা এখনো ইতিহাসের একটা মজার দাগ হিসেবে রয়ে গেছে।
৩. জন্মদিন হারিয়ে যাওয়ার ভয়
কোথায় ঘটেছিল? বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে ব্রিটেন ও তার উপনিবেশে।
গল্পটা কী? যখন ১৭৫২ সালে ব্রিটেনে ১১ দিন বাদ দেওয়া হয়, কিছু মানুষের মধ্যে ভয় ছড়িয়ে পড়ে যে তাদের জন্মদিন বা গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলো হারিয়ে যাবে। যেমন, যাদের জন্মদিন ছিল ৩ থেকে ১৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে, তারা কৌতুক করে বলত, তাদের জন্মদিন এবার আর আসবে না। কেউ কেউ আবার দাবি করত, তাদের বয়স কমে গেছে!
মজার দিকটা কী? আসলে জন্মদিন বা বয়সের কোনো পরিবর্তন হয়নি, কারণ দিনগুলো শুধু ক্যালেন্ডার থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল, জীবন থেকে নয়। তবু, কিছু লোক এই নিয়ে মজা করে চিঠি লিখত বা গল্প ছড়াত। এমনকি কিছু গল্পে শোনা যায়, লোকেরা দাবি করত তাদের বাড়ির ভাড়া বা ঋণের তারিখও এই ১১ দিনের সঙ্গে "মুছে" যাওয়া উচিত!
৪. রাশিয়ার অলিম্পিক বিভ্রান্তি
কোথায় ঘটেছিল? রাশিয়ায়, ১৯০০ সালের কাছাকাছি।
গল্পটা কী? রাশিয়া গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার গ্রহণ করতে অনেক দেরি করে, ১৯১৮ সাল পর্যন্ত তারা জুলিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবহার করত। ফলে, ১৯ শতকের শেষে আর ২০ শতকের শুরুতে তাদের ক্যালেন্ডার বাকি বিশ্বের থেকে ১৩ দিন পিছিয়ে ছিল। এই পার্থক্যের কারণে ১৯০০ সালের প্যারিস অলিম্পিকে রাশিয়ার ক্রীড়াবিদদের সময়সূচি নিয়ে বিভ্রান্তি হয়। কিছু ইভেন্টে তারা ভুল তারিখে পৌঁছে যায়, কারণ তারা জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের হিসাবে চলছিল!
মজার দিকটা কী? এই বিভ্রান্তির কারণে রাশিয়ান দলের কিছু খেলোয়াড় ইভেন্টে অংশ নিতে পারেনি বা দেরিতে পৌঁছেছিল। এটা কল্পনা করুন—আপনি মেডেল জেতার জন্য গেছেন, আর শুনলেন আপনার ইভেন্ট দুই সপ্তাহ আগে শেষ হয়ে গেছে! এই ঘটনা পরে রাশিয়ার গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে যাওয়ার জন্য একটা বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
৫. শেক্সপিয়র আর সার্ভান্তেসের মৃত্যুর তারিখের ধাঁধা
কোথায় ঘটেছিল? ইংল্যান্ড ও স্পেনে।
গল্পটা কী? বিখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম শেক্সপিয়র (ইংল্যান্ড) এবং মিগুয়েল দে সার্ভান্তেস (স্পেন) দুজনেই ১৬১৬ সালের ২৩ এপ্রিল মারা যান বলে রেকর্ড আছে। এটা শুনে মনে হতে পারে, তারা একই দিন মারা গেছেন। কিন্তু আসলে তা নয়! স্পেন তখন গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবহার করছিল, আর ইংল্যান্ড জুলিয়ান ক্যালেন্ডার। ফলে, শেক্সপিয়রের মৃত্যুর দিন (জুলিয়ান ২৩ এপ্রিল) আসলে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে ৩ মে ১৬১৬ ছিল।
মজার দিকটা কী? এই তারিখের পার্থক্যের কারণে অনেকে মনে করেন, দুই সাহিত্যিক একই দিন মারা গেছেন, যা একটা কাব্যিক কাকতালীয় ঘটনা বলে মনে হয়। কিন্তু বাস্তবে তারা ১০ দিনের ব্যবধানে মারা যান। এটা ক্যালেন্ডারের পার্থক্যের একটা মজার উদাহরণ, যা ঐতিহাসিক ঘটনার ব্যাখ্যায় ধাঁধা তৈরি করে।
বিভিন্ন দেশে ক্যালেন্ডার পরিবর্তনের সময় মানুষের প্রতিক্রিয়া, ভুল বোঝাবুঝি বা অদ্ভুত পরিস্থিতির সৃষ্টি নিয়ে। চলুন দেখি:
১. আলাস্কার "দুইবার শুক্রবার" কাণ্ড
কোথায় ঘটেছিল? আলাস্কায়, ১৮৬৭ সালে।
গল্পটা কী? ১৮৬৭ সালে রাশিয়া থেকে আমেরিকার কাছে আলাস্কা বিক্রি হয়। রাশিয়া তখনও জুলিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবহার করছিল, আর আমেরিকা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে ছিল। ফলে, আলাস্কার ক্যালেন্ডার সামঞ্জস্য করতে ১২ দিন বাদ দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি, আলাস্কা আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা (International Date Line) এর পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে চলে যায়। এই দুই পরিবর্তনের ফলে একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটে: ১৮৬৭ সালের ৬ অক্টোবর শুক্রবারের পরের দিন আবার ৬ অক্টোবর শুক্রবার হয়! মানে, আলাস্কার মানুষ একই সপ্তাহে দুটো শুক্রবার পায়।
মজার দিকটা কী? কল্পনা করুন, আপনি শুক্রবারের পর ভাবছেন কাল শনিবার, কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখেন আবার শুক্রবার! কিছু গল্পে শোনা যায়, স্থানীয় লোকেরা এই নিয়ে মজা করে বলত, "আমরা একটা ফ্রি শুক্রবার পেয়ে গেছি!"। আরেকটা মজার বিষয় হলো, এই পরিবর্তনের কারণে কিছু লোকের জন্মদিন বা গুরুত্বপূর্ণ তারিখ নিয়ে বিভ্রান্তি হয়। যেমন, কেউ যদি ৬ অক্টোবর জন্মায়, তারা কোন শুক্রবারের কথা বলবে?
২. গ্রিসের মঠে লুকিয়ে থাকা জুলিয়ান ক্যালেন্ডার
কোথায় ঘটেছিল? গ্রিসের মাউন্ট অ্যাথোসে, ১৯ শতক থেকে ২০ শতক।
গল্পটা কী? গ্রিস ১৯২৪ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার গ্রহণ করে, ১৩ দিন বাদ দিয়ে। কিন্তু মাউন্ট অ্যাথোসের কিছু অর্থোডক্স খ্রিস্টান মঠে সন্ন্যাসীরা এই পরিবর্তন মানতে অস্বীকার করে। তারা জুলিয়ান ক্যালেন্ডারেই ধর্মীয় উৎসব পালন করতে থাকে। ফলে, তাদের ক্রিসমাস বা ইস্টারের তারিখ বাকি গ্রিসের থেকে ১৩ দিন পিছিয়ে যায়। এমনকি আজও মাউন্ট অ্যাথোসের কিছু মঠ জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে।
মজার দিকটা কী? এটা কল্পনা করুন—আপনি গ্রিসে গেলেন ক্রিসমাস উদযাপন করতে, ২৫ ডিসেম্বরে সবাই উৎসবে মেতে উঠেছে, কিন্তু মাউন্ট অ্যাথোসে গিয়ে দেখলেন তারা এখনো ১২ ডিসেম্বর পালন করছে! স্থানীয় লোকেরা এই নিয়ে মজা করে বলে, "অ্যাথোসে গেলে সময় যেন পিছিয়ে যায়।" আরেকটা মজার গল্প হলো, কিছু পর্যটক ভুল করে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের তারিখে উৎসব দেখতে গিয়ে খালি মঠ পেয়েছে, কারণ তারা গ্রেগরিয়ান তারিখে গিয়েছিল!
৩. জাপানের ক্যালেন্ডার বিভ্রান্তি
কোথায় ঘটেছিল? জাপানে, ১৮৭৩ সালে।
গল্পটা কী? জাপান ১৮৭৩ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার গ্রহণ করে, তখন তারা তাদের ঐতিহ্যবাহী চন্দ্র-সৌর ক্যালেন্ডার থেকে সরাসরি গ্রেগরিয়ানে চলে যায়। এই পরিবর্তনের সময় ১৮৭২ সালের ডিসেম্বরে পুরো এক মাস বাদ দেওয়া হয়। মানে, ১৮৭২ সালের ২ ডিসেম্বরের পর হঠাৎ ১৮৭৩ সালের ১ জানুয়ারি শুরু হয়। এই পরিবর্তন নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ায়। কিছু লোক ভেবেছিল, তাদের বেতন বা ফসলের হিসাবে ঠকানো হচ্ছে, কারণ তারা পুরো একটা মাস "হারিয়েছে"।
মজার দিকটা কী? কিছু গল্পে শোনা যায়, গ্রামের লোকেরা এই নিয়ে মজা করে বলত, "সরকার আমাদের বড়দিনের ছুটিটাও চুরি করে নিল!" আরেকটা মজার ঘটনা হলো, কিছু ব্যবসায়ী এই বিভ্রান্তির সুযোগ নিয়ে পুরানো ক্যালেন্ডারের হিসাবে পণ্য বিক্রি করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু গ্রাহকরা তাদের ধরে ফেলে। এই পরিবর্তন জাপানের আধুনিকীকরণের একটা বড় পদক্ষেপ ছিল, কিন্তু সাধারণ মানুষের জন্য এটা ছিল একটা হাস্যকর ধাঁধা।
৪. জর্জ ওয়াশিংটনের জন্মদিনের জটিলতা
কোথায় ঘটেছিল? আমেরিকায়, ১৭৫২ সালে।
গল্পটা কী? জর্জ ওয়াশিংটন, আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট, জন্মেছিলেন ১৭৩২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি, যখন আমেরিকা জুলিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবহার করছিল। কিন্তু ১৭৫২ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশগুলো (যার মধ্যে আমেরিকা ছিল) গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে যায়, ১১ দিন বাদ দিয়ে। ফলে, ওয়াশিংটনের জন্মদিন গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে হয় ২২ ফেব্রুয়ারি। তিনি নিজে পরে তার জন্মদিন হিসেবে ২২ ফেব্রুয়ারি পালন করতেন।
মজার দিকটা কী? এটা নিয়ে মজার গল্প ছড়িয়ে পড়ে যে ওয়াশিংটনের জন্মদিন "চলে গেল" ১১ দিন এগিয়ে। কিছু লোক কৌতুক করে বলত, "ওয়াশিংটন এত তাড়াতাড়ি বড় হয়ে গেলেন যে ক্যালেন্ডারই তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারল না!" আরেকটা মজার বিষয় হলো, আমেরিকায় এখনো ওয়াশিংটনের জন্মদিন ২২ ফেব্রুয়ারি হিসেবে পালিত হয়, কিন্তু ঐতিহাসিকরা মাঝে মাঝে এই তারিখ নিয়ে মজা করে বলেন, "জর্জের জন্মদিন ক্যালেন্ডারের সঙ্গে লুকোচুরি খেলছে।"
৫. রাশিয়ার অক্টোবর বিপ্লবের নামের ধাঁধা
কোথায় ঘটেছিল? রাশিয়ায়, ১৯১৭ সালে।
গল্পটা কী? রাশিয়ার বিখ্যাত অক্টোবর বিপ্লব, যা বলশেভিকরা ১৯১৭ সালে করেছিল, আসলে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২৫ অক্টোবর ঘটেছিল। কিন্তু গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে এটা ছিল ৭ নভেম্বর। রাশিয়া ১৯১৮ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার গ্রহণ করার পর এই বিপ্লবের তারিখ নিয়ে বিভ্রান্তি শুরু হয়। ইতিহাসে এটাকে এখনো "অক্টোবর বিপ্লব" বলা হয়, যদিও গ্রেগরিয়ান হিসাবে এটা নভেম্বরে ঘটেছিল।
মজার দিকটা কী? এই নামের জটিলতা নিয়ে ঐতিহাসিকরা মজা করে বলেন, "রাশিয়া এমন একটা বিপ্লব করল যার নামই ভুল মাসে আটকে গেল!" কিছু গল্পে শোনা যায়, বিপ্লবের পরে যখন রাশিয়া গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে যায়, তখন কিছু লোক কৌতুক করে বলত, "আমরা অক্টোবরে বিপ্লব করলাম, আর এখন দেখছি নভেম্বরে জিতে গেছি!" এটা ক্যালেন্ডার পরিবর্তনের একটা মজার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
উপসংহার: ক্যালেন্ডার পরিবর্তনের এই গল্পগুলো দেখায় যে একটা সাধারণ গণনার সংশোধন কীভাবে মানুষের জীবনে হাসি, বিভ্রান্তি, এমনকি ঐতিহাসিক ধাঁধার জন্ম দিতে পারে। সুইডেনের ৩০ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু কর অক্টোবর বিপ্লবের নামের জটিলতা—প্রতিটা ঘটনাই ইতিহাসকে একটু রঙিন করে তুলেছে।